Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

খাদ্য নিরাপদতায় প্র্র্রয়োজন সকল অংশীজনের অংশগ্রহণ

মো: কাওছারুল ইসলাম সিকদার

খাদ্য নিরাপদতা রক্ষার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রয়েছে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা, ৪৯২টি উপজেলা, ১২টি সিটি কর্পোরেশন এবং ৩৩০টি পৌরসভা, ১৫টি মন্ত্রণালয়, ২০টি এজেন্সি। পাশাপাশি সম্পৃক্ত রয়েছে বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধানসমূহ


বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ুগত কারণ, মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা, বিশ্ব বাণিজ্যের প্র্রসার, নগরকেন্দ্রিক মানুষের জীবন, পছন্দসই খাদ্য প্র্রাপ্তি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্বের প্র্রায় প্রতিটি দেশ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, শিল্পায়ন ও কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে বিশ্ব তার প্রাকৃতিক ভারসাম্য প্রতিনিয়ত হারাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য, নষ্ট হচ্ছে মাটি, পানি ও বাতাসের গুণগত মান। তাই খাদ্যের নিরাপত্তা নিয়ে পূর্বে শংকা থাকলেও খাদ্য নিরাপদতা নিয়ে মানুষের উদ্বেগ ছিল না। ষাটের দশক হতে বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও দরিদ্রতা দূরীকরণে কৃষি উৎপাদনের ওপর ব্যাপক জোর প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে খাদ্যের জোগানের সঙ্গে সঙ্গে এর পুষ্টি ও খাদ্যের গুণগতমান রক্ষায় বিশ্ব আজ অধিকতর সজাগ। কারণ সুস্বাস্থ্যের জন্য কেবল খাদ্য গ্রহণই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সুষম ও নিরাপদ খাদ্য। আর এ দুটির অভাবে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষ অসুস্থ্য হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে অনিরাপদ খাদ্যজনিত রোগের কারণে বিশ্বব্যাপী ২০১৬ সালে ৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ উৎপাদনশীলতা হ্রাস প্রায়, চিকিৎসায় ব্যয় হয় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৫ থেকে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনের লক্ষ্যে উৎপাদন পর্যায় থেকে ভোগ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। উৎপাদন হতে ভোগ পর্যন্ত এ শৃঙ্খলের কোনো একটি পর্যায়ে যদি খাদ্যের মান যথাযথ রক্ষা করা না হয় তবে সে খাদ্য আর নিরাপদ থাকে না। তাই উত্তম কৃষি চর্চা (GAP), উন্নত উৎপাদন অনুশীলন (GMP), উন্নত স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন (Good Hygiene practice-GHP), ট্রেসিবিলিটি (Traceability), কোল্ড চেইন ম্যানেজমেন্ট (Cold Chain Management) প্রভ‚তি বিষয় নিয়ে বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার () সহযোগিতায় বিশ্বব্যাপী নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে তথা খাদ্যের গুণগতমান রক্ষার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।


নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে রাষ্ট্রের প্রাথমিক কাজ হলো নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়ন করে এ কার্যক্রমের আইনগত বৈধ্যতা ও প্রাতিষ্ঠানিকতা প্রদান। পরবর্তীতে সে আইনের আলোকে বিধিবিধান, প্র্রবিধানমালা এবং নীতিমালা প্রণয়ন করা পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন হতে ভোক্তা পর্যন্ত শৃঙ্খলের প্রতিটি স্তরে দিকনির্দেশনা প্রদান, মনিটরিং ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মূলত নীতিনির্ধারণ পর্যায়ের পরে সরকারের বাস্তবায়নে জনবল নিয়োগ এবং ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সিভিল সোসাইটি, একাডেমিয়া, গবেষক এবং মিডিয়াসহ সকল অংশীজনের নিয়ে সমন্বয়কের ভ‚মিকা পালন করে। কারণ খাদ্য নিরাপদতার সাথে দেশের প্রতিটি মানুষ যেমন জড়িত, তেমনি পরিবেশ রক্ষা থেকে খাদ্য উৎপাদন, শুকানো, মজুদ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজতকরণ, মোড়কীকরণ, লেবেলিং, আমদানি, রপ্তানি, বাজারজাতকরণ, রান্না ও পরিবেশন পর্যন্ত প্রায় সকল পর্যায়ের অংশগ্রহণকারীরা খাদ্য নিরাপদতার সাথে যুক্ত। সেজন্য GAP, GMP, GHP, Traceability Cold Chain Management প্রভৃতি বিষয়গুলো যথাযথভাবে প্রতিটি খাদ্য প্রতিষ্ঠানকে অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক। খাদ্য নিরাপদতা রক্ষায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কাজ হলো খাদ্য সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানে এসব বিষয় অনুসরণ করে যেন খাদ্য প্রস্তুত করে তা মনিটরিং করা, আমদানি/রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করা এবং দেশের সকল অংশীজনদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করা।


বাংলাদেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা, ৪৯২টি উপজেলা, ১২টি সিটি কর্পোরেশন এবং ৩৩০টি পৌরসভা, ১৫টি মন্ত্রণালয়, ২০টি এজেন্সি খাদ্য নিরাপদতা রক্ষার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধানসমূহ খাদ্য নিরাপদতা কার্যের সহিত সম্পৃক্ত। যেমন- নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩;


বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন আইন, ২০১৮; Animal Stingless and Meat Quality Control Act, 2011; মৎস্য ও পশু খাদ্য আইন, ২০১০; বালাইনাশক (পেস্টিসাইডস) আইন, ২০১৮, মৎস্যসঙ্গ নিরোধ আইন, ২০১৮; আমদানিনীতি আদেশ ২০১৫-২০১৮; রপ্তানিনীতি আদেশ ২০১৮-২০২১; মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০২০


খাদ্য নিরাপদতার জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সংস্থা (Apex Body) হিসেবে কাজ করলেও খাদ্য নিরাপদতামূলত সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের যুগপৎ কার্যক্রমের ফসল। খাদ্য নিরাপদতা নিশ্চিত না করা গেলে জনস্বাস্থ্যহীনতার সাথে সাথে অপুষ্টি, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, খাবারের অপচয় ঘটবে। অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক বাণিজ্য ভারসাম্য ও প্রতিক‚লতার সম্মুখীন হবে। সেইসাথে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও ক্ষুন্ন হবে। বর্তমান বিশ্বে খাদ্যশস্যসহ খাদ্যপণ্যের আমদানি-রপ্তানি তথা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য খাদ্যের নিরাপদতা অত্যাবশ্যক। কেননা মানুষের আর্থিক সঙ্গতি বৃদ্ধির সাথে সাথে রুচি ও জীবন ধারণের ধরন ও প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন পণ্যযুক্ত হচ্ছে। তাই দেশে যদি নিম্নমানের খাদ্য ও খাদ্যপণ্য উৎপাদন হয় তবে তা টেকসই হবে না বরং সেখানে উন্নতমানের পণ্য আমদানির মাধ্যমে দেশে উৎপাদিত নিম্নমানের পণ্যের জায়গা দখল করবে। এছাড়া পর্যটন শিল্পের বিকাশে ও বৈচিত্র্যময়, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। সে কারণে উন্নত দেশসমূহ ভোক্তার স্বাস্থ্য ও রুচির দিকে লক্ষ্য রেখে মানসম্মত খাদ্য প্রস্তুত ও তা পরিবেশনের ওপর গুরুত্বরোপ করছে। উন্নত ও টেকসই পরিবহন ও মজুদ ব্যবস্থাপনা এবং দেশে উন্নত খাদ্য শিল্পের বিকাশ ঘটানো সম্ভাবনা হলে খাদ্যের নিরাপদতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। যত্রতত্র ছোট ছোট উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যে খাদ্য প্রস্তুত বা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিপণন করছে তা অনেক ক্ষেত্রেই ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর। এসব প্রতিষ্ঠানমূলত নামে-বেনামে, অনুমোদনহীনভাবে এবং গোপনে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য প্রস্তুত করে। এদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও সবসময় ওয়াকিবহাল থাকে না। তাই খাদ্যেরমান রক্ষা করে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ খাদ্য প্রস্তুতের জন্য খাদ্য শিল্পকে সহযোগিতা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।


নিরাপদ খাদ্য প্রস্তুত করে দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য রক্ষাসহ রপ্তানি বৃদ্ধির টেকসই পরিকল্পনা সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। দেশের সমুদ্র (নীল) অর্থনীতির প্রসার এবং আহরিত সম্পদ দ্বারা এদেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে সমুদ্রের মাছ, শেওলা ও অন্যান্য প্রাণিজ জাতীয় খাদ্য আহরণের বিষয়ে যথাযথ আইন ও বিধি বিধান প্রণয়ন করতে হবে।


খাদ্যের নিরাপদতা রক্ষায় প্লাস্টিকসামগ্রী যেমন জরুরি তেমনি এর ঝুঁকিও রয়েছে। তাই আমাদের প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ করতে হবে। বর্তমানে খাদ্যের গুণগতমান ও নিরাপদতা রক্ষায় যেমনি ভার্জিনরেজিন হতে ফুড গ্রেডে প্লাস্টিকসামগ্রী তৈরি হচ্ছে তেমনিভাবে সঠিক বৈজ্ঞানিক নীতিমালা অনুসরণ না করে পুরাতন ও ব্যবহৃত প্লাস্টিক হতে রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় পুনরায় পানির বোতল ও অন্যান্য প্লাস্টিকসামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। খাদ্যশিল্পে ব্যবহৃত এসব প্লাস্টিকসামগ্রী হতে খাদ্যে বিষক্রিয়া ছড়াতে প্রারে। সে  সাথে অব্যবহৃত প্লাস্টিক জমি ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে। তাই ব্যবহৃত প্লাস্টিক রিসাইকেল করে পুুনরায় ব্যবহার অত্যবশ্যক। ইউরোপ ও আমেরিকায় রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় ফুড গ্রেডেড প্লাস্টিক তৈরির নীতিমালা তৈরি করেছে। সে সাথে রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় ফুড গ্রেডেড প্লাস্টিকসামগ্রী উৎপাদনে বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে এবং সরকারের পক্ষ হতে নানামুখী প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। যাতে করে ব্যবহৃত প্লাস্টিকসামগ্রী পুনরায় ব্যবহার করা যায় এবং প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশ ও খাদ্য রক্ষা করা যায়। উন্নত দেশগুলোর ন্যায় রিসাইকেল প্রক্রিয়ায় প্লাস্টিক উৎপাদন ও এর ব্যবহার নীতিমালা অনুসরণ করে দেশে প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক রেজিন আমদানি কমানো যেতে পারে এবং যত্রতত্র ছড়ানো প্লাস্টিক বোতল ও অন্যান্য প্লাস্টিক পণ্য পুনরায় রিসাইকেল করে ফুড গ্রেডেড প্লাস্টিক তৈরি করে পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমানো যেতে পারে।


মনিটরিং, নজরদারি, প্র্রশিক্ষণ ও খাদ্যের গুণগতমান যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা। সে সাথে প্রয়োজন আধুনিক কারিগরি কৌশলসমৃদ্ধ খাদ্যশিল্প প্রতিষ্ঠান; যারা দেশের ও বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন খাদ্য প্রস্তুত, পরিবহণ, সংরক্ষণ, মোড়কীকরণ ও বাজারজাতকরণে সক্ষম। যেটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা/প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সম্ভব নয়। আধুনিক খাদ্য শিল্পের অবকাঠামো যেমনটি উন্নত, তেমনি এর লোকবল ও খাদ্য নিরাপদতার বিষয়সমূহ সম্পর্কে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অবগত। তাই দেশে উৎপাদিত ও সহজ লভ্য কাঁচামালের সঠিক ব্যবহার, জনস্বাস্থ্যে, পর্যটন, বাণিজ্যের প্রসার ও বেসরকারিভাবে খাদ্য শিল্পের প্রসারে সরকারি সহযোগিতার উদ্যোগ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্র্রয়োজন।

উপসচিব, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, প্রবাসী কল্যাণ ভবন, ৭১-৭২ ইস্কাটন গার্ডেন (১৩ তলা), ঢাকা; ই-মেইল : kawserul1173@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon